সাম্প্রতিক বার্তা
মাদারগঞ্জে বন্যা পূর্বাভাস ভিত্তিক আগাম পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বিষয়ক মহড়া অনুষ্ঠিত
ধামইরহাটে জলবায়ু সহনশীল পানি ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মতবিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ইএসডিও-আরএমটিপি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ
দূর্যোগ সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়তে দিনাজপুরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত
কুড়িগ্রামে ইএসডিও-সীড্স কর্মসূচীর আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে আনসারুল ইসলাম মাছ চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মৃত কেরামত আলীর সন্তান আনসারুল, যিনি ২০২২ সালের মার্চ মাসে ‘অফ-ফ্লেভার মুক্ত পাঙ্গাশ-কার্প মিশ্রচাষ’ পদ্ধতি নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন, বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে সফল একজন মৎস্য উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। শুরুতে ৪টি পুকুরে চাষ শুরু করলেও বর্তমানে তার পুকুরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮টিতে।
আনসারুল বর্তমানে ৫০ শতক আয়তনের পুকুরে মিশ্রভাবে পাঙ্গাশ, কার্প এবং তেলাপিয়া মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষের ফলে তিনি প্রতি বছর প্রায় ১৭ লাখ টাকা আয় করছেন। এছাড়া তার উদ্যোগ থেকে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
আনসারুল ইসলাম জানান, “আমি ছোট থেকেই মাছ চাষের প্রতি আকর্ষিত ছিলাম, কিন্তু সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে সফল হতে পারিনি। ইএসডিও থেকে কারিগরি সহায়তা ও ঋণ পেয়ে আমি আমার কার্যক্রম শুরু করি। অফ-ফ্লেভার মুক্ত পদ্ধতিটি কাজে লাগিয়ে আমার মাছের স্বাদ ও মান উন্নত হয়েছে, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করছে।”
আনসারুলের সাফল্যে এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশি। গড়েয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, “আনসারুল ভাইয়ের মাছ চাষ দেখে আমাদের মধ্যেও আগ্রহ জন্মেছে। তার মতো সফল হতে চাই। তার উদ্যোগে আমাদের এলাকায় নতুন একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
আনসারুলের এ সফলতা শুধুমাত্র তার নিজস্ব নয়, বরং এটি স্থানীয় মানুষের জন্য উদাহরণ এবং অনুপ্রেরণার উৎস। তার এই উদ্যোগে ইএসডিও’র কারিগরি ও ঋণ সহায়তা এবং সরকারি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগকে সবাই প্রশংসা করছে।
ইএসডিও’র মৎস্য অফিসার হরুন অর রশিদ বলেন, “আনসারুলের এই সফলতার পেছনে সঠিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পিকেএসএফের অর্থায়নে ইএসডিও সমন্বিত কৃষি ইউনিটের মৎস্য খাতের আওতায় তাকে মাছ চাষে উন্নত প্রযুক্তি ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তার এই সাফল্য অন্য মাছ চাষিদের জন্যও অনুপ্রেরণা হতে পারে।”
ঠাকুরগাঁও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা আকতার বলেন, “আনসারুল ইসলাম একজন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মাছ চাষে এমন সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নই নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে আমরা এই চাষিদের পাশে দাঁড়াতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।”
ঠাকুরগাঁওয়ে ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-ইএসডিও প্রধান কার্যালয়ের মেধা অনুশীলন কেন্দ্রে আএমটিপি এর অধীনে মনিটরিং ও ইভালুয়েশন বিষয়ক পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে। ২৬-৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান এই কর্মশালাটি ইএসডিও’র আয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট এর অর্থায়নে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন -পিকেএসএফ-এর সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। এতে অংশ নিয়েছেন দেশের ১৮টি সহযোগী সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট ও মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন কর্মকর্তারা।
কর্মশালার উদ্বোধন করেন পিকেএসএফ-এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুল মতিন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ডীন প্রফেসর মো. বশির আহমেদ, পিকেএসএফ-এর ভ্যালু চেইন প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. এরফান আলী, পিকেএসএফ-র মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অফিসার মো. আনিছুর রহমান এবং ট্রেনার এস এম জুবায়ের আলি খান। প্রশিক্ষণের সঞ্চালনায় ছিলেন ইএসডিও-র হেড অব ইনক্লুসিভ মাইক্রোফিন্যান্স মো. আইনুল হক। তিনি ইএসডিও-র বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়া মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং লার্নিং অ্যান্ড শেয়ারিং সেশনে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন পিকেএসএফ আরএমটিপি প্রকল্পের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অফিসার মো. আনিছুর রহমান। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা মনিটরিং এবং ইভালুয়েশন কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবেন, যা স্থানীয় উদ্যোগগুলোর উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেছেন।
ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (BD Rural WASH) প্রকল্পের নীলফামারী জেলার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সম্প্রতি পরিদর্শন করেছেন পিকেএসএফ এর জেনারেল ম্যানেজার এবং প্রকল্প সমন্বয়কারী, মো: আব্দুল মতিন । পরিদর্শনের সময় ইএসডিও-এর সিনিয়র উন্নয়ন কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন এবং তারা প্রকল্পের অগ্রগতি, কার্যক্রমের বিস্তারিত এবং এর সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেন।
পরিদর্শনের সময় মো: আব্দুল মতিন প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং মাঠ পর্যায়ের কাজের প্রশংসা করেন। প্রকল্পটি গ্রামীণ এলাকার পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যবিধি সচেতনতা ও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রকল্পের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আরও কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে এই উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান।