Home » ইএসডিও’র সহযোগীতায় ঠাকুরগাঁওয়ে পাপোশ তৈরি করে স্বাবলম্বী রুফিনা হেমব্রম

ইএসডিও’র সহযোগীতায় ঠাকুরগাঁওয়ে পাপোশ তৈরি করে স্বাবলম্বী রুফিনা হেমব্রম

by Nobin Hasan
০ comments ৯৬ views
A+A-
Reset

পরিত্যক্ত  ঝুটের তৈরি পাপোশে  ভাগ্য বদল  হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি গ্রামের রুফিনা হেমব্রমের। স্থানীয় বাজারসহ সারাদেশে রয়েছে এসব পাপোশের ব্যাপক চাহিদা।  উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রমীণ মানুষের  প্রধান পেশা কৃষি। বছরের কয়েক মাস কৃষিকাজ থাকলেও বেশীর ভাগ সময়ে অলস বসে থাকতে হয়।  দরিদ্র এসব পরিবার তখন বেশ অর্থ সংকটে পড়ে। আর এসব দরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করতে তাদের পাশে এসে   দাঁড়ায় ইএসডিও । হেকস / ইপার    -এর অর্থায়নে ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)এর প্রেমদীপ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৪৫ জন নারীকে পাপোশ তৈরীর প্রশিক্ষণ  দেয়া হয়।  শুধু তাই নয় এই ২৪৫ জন নারীকে দেওয়া হয় পাপোশ তৈরির যন্ত্র এবং সরবরাহ করা হয় কাঁচামাল।  ২৪৫ জন নারীই  সংসারের কাজের পাশাপশি শুরু করেন নিজ বাড়িতে পাপোশ তৈরী ।

প্রশিক্ষণ শেষে কিছুদিন একা পাপোশ তৈরী করে রুফিনা পরিকল্পনা করে সে একটি কারখানা দিবে । এর পরে ইএসডিও থেকে লোন নিয়ে নিজের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি জমিতে  শুরু করেন পাপোশ কারখানা । ধিরে ধিরে লাভের মুখ দেখতে থাকে সে । এখন সে স্বয়ংসম্পূর্ণ । সংসারে নেই আর অভাব অনটন।রুফিনা হেমব্রম বলেন,আমি একসময় খুব অবহেলিত ছিলাম ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী বলে অনেকে কাজে নিতো না। ইএসডিও প্রেমদীপ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি   সহায়তায় পাপোষ তৈরীর কার্যক্রম  শুরু করি এখন আমার প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হয় এবং ২০ জন পিছিয়ে পড়া নারী ও পুরুষ কাজ করছে আমার কারখানায় । আগে আমার পরিবারই আমার মূল্যায়ন করত না কিন্তু এখন আমাকে শুধু পরিবার না গ্রামের অন্যান্য সবাই সম্মান করে এবং বিভিন্নভাবে আমার পরামর্শও নিয়ে থাকে । পাপোষ তৈরির জন্য আমরা যে ঝুটটি ব্যবহার করছি তা বিভিন্ন গার্মেন্স ফ্যাক্টরি আর্বজনা হিসেবে ফেলে দিত যা পরিবেশের ক্ষতি করত । আমরা সেগুলো সংগ্রহ করে কাজে লাগাছি। যার মাধ্যমে একদিকে পরিবেশ দূষন রোধ হচ্ছে এবং আমরা পাপোষ তৈরি করতে পারছি। আমাদের এ কাজের কারণের কমিউনিটির লোকজন এবং স্থাণীয় প্রশাসন আমাদের প্রশংসা করছে। যদি সরকার অমার এই ব্যবসার জন্য স্বল্পসুদে লোন দেয় তাহলে আমি বড় পরিসরে এই কারখানাটি করতে চাই ।

পাপোশ তৈরির পরে পোহাতে হয় না বিক্রি  করার ঝামেলাও। বাড়ি থেকেই প্রতি সপ্তাহে  পাপোশ  গুলো ক্রয় করে নিয়ে যায়  একটি প্রতিষ্ঠান। সংসারের কাজের পাশাপাশি এসব পাপোশ তৈরি করে মাসে ৬থেকে ৭ হাজার  টাকা আয় করছেন গ্রামীণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর  এই নারীরা। তাদের দেখে উদ্ভূত হচ্ছেন আশেপাশের অন্যান্য নারীরাও। রুফিনা হেমব্রম এর কারখানার শ্রমিক তার্তুল মুর্মু বলেন,আগে আমরা বন জঙ্গল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে দিন যাপন করতান বনজঙ্গলের সাথে কৃষি জমিও কমে গেছে সে কারণে আমরা বেকার হয়ে পড়েছেলাম । ইশ্বরের আর্শিবাদে এই কারখানাটি হয়েছে এখন আমরা ভাল আছি।

কারখানার শ্রমিক নির্মলা টপ্পো বলেন,মূল সমাজের মানুষ আমাদের কাজে নেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা অনিহা প্রকাশ করে থাকে । আমরা নারীরা মাঝে মধ্যে তাদের বাড়ি ও কৃষি জমিতে কাজ করে থাকি । কাজে নিলেও আমরা সেখানে মজুরি বৈষম্যের স্বীকার হই। এই কারখানায় কাজ করার ফলে আমরা এখন নায্য মুজুরি  পাচ্ছি । একই সাথে অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে মূল সমাজের কাছে আমাদের গ্রহনযোগ্যতা বেড়ে গেছে।

ইএসডিও নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, বাংলাদেশে অনেক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কিন্তু বাজারজাত করতে না পারলে সেটা কাজে আসে না।  কিন্তু এটি আমরা প্রাইভেট সেক্টরের সাথে এমন ভাবে মিলিয়ে দিয়েছি যে তার প্রশিক্ষণ যেদিন শেষ হয়েছে সেদিন থেকে তার আয় এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।আমরা প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাচ্ছি অতি দরিদ্র নারীরা কিভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে এবং দারিদ্র্য  মুক্ত হচ্ছে। বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান বলেন, রুফিনা হেমব্রম সহ অন্য উদ্যোক্তারা যদি আমাদের কাছে ঋণের আবেদন করে সে ক্ষেত্রে আমরা যাচাই বাছাই করে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করবো । এ ছাড়াও তারা যদি ব্যবসা ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ সহ পন্য বিদেশে রপ্তানি করতে চায় সেই ক্ষেত্রেও আমরা তাদের সহযোগীতা করবো।

 

ইএসডিও বার্তা

ই এ স ডি ও ’ র  নি য় মি ত  মু খ প ত্র